স্টার্টআপ কি? কীভাবে নতুন আইডিয়া দিয়ে স্টার্টআপ গড়ে তুলবেন

স্টার্টআপ বিজনেস প্লান

স্টার্টআপ একটি ইংরেজী শব্দ। অনুবাদ করলে ষ্টার্টআপ এর অর্থ দাঁড়ায় নতুন ব্যবসা। সব ষ্টার্টআপ-ই নতুন উদ্যোগ, তবে সব নতুন উদ্যোগ যে ষ্টার্টআপ, বিষয়টা মোটেও তা নয়।

যেকোনো নতুন উদ্যোগ হয়তো স্টার্ট-আপ, নয়তো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বা এসএমই। তবে উদ্যোগটা স্টার্ট-আপ নাকি একটি এসএমই- তার উপর নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ।

এসএমই এবং স্টার্টআপের মধ্যে বড় পার্থক্য হলো- একজন এসএমই উদ্যোগতা ১০ বছরে যা করার স্বপ্ন দেখে, একটা স্টার্টআপ সেটা ১ বছরে, অথবা তারও কম সময়ে করার স্বপ্ন দেখে।

এসএমইর ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই লাভ করা সম্ভব এবং অল্প কিছু বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠান লাভজনক হয়ে যেতে পারে, আর বিনিয়োগেরও তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে একটি ষ্টার্টআপ থেকে সাধারনত শুরুতেই আয় করা যায় না।

একটি স্টার্টআপে ঝুঁকি যেমন বেশি, বিনিয়োগের ওপর রিটার্নও অনেক অনেক বেশি। বিনিয়োগ করার আগে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীর ভালোমতো বুঝে নিতে হবে উদ্যোগটি কোন ধাঁচের- এসএমই না ষ্টার্টআপ, এতে ঝুঁকি কেমন, এবং রিটার্নের সম্ভাবনা কেমন। তাহলে আর ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে না। – রাহাত আহমেদ: ফাউন্ডিং পার্টনার এবং সিইও, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ।

স্টার্টআপ কি এবং শুরু করার আগে যা যা জানা জরুরি

স্টার্ট-আপ (Startup) হলো একটি নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ যা সাধারণত একটি নতুন পণ্য, সেবা বা ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করে। এটি সাধারণত ছোট আকারের এবং সীমিত সম্পদ নিয়ে শুরু হয় এবং দ্রুতগতিতে বড় হতে চায়। স্টার্টআপ মূলত প্রযুক্তিনির্ভর বা উদ্ভাবনী পণ্য ও পরিষেবার মাধ্যমে বাজারে একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে।

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতায় স্টার্ট-আপ শব্দটি একটি জনপ্রিয় ধারণা। এটি মূলত একটি নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ যা উদ্ভাবনী পণ্য, সেবা বা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল ব্যবসার মডেল হয়ে উঠেছে স্টার্টআপ। উদ্ভাবনী ধারণা, দ্রুত প্রবৃদ্ধি, এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এর মূল চালিকা শক্তি।

স্টার্টআপের সংজ্ঞা

স্টার্টআপ হলো একটি নতুন ব্যবসা বা উদ্যোগ যা সাধারণত একটি অনন্য সমস্যা সমাধান বা পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করে। এটি ছোট পরিসরে শুরু হলেও বৃহৎ সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করে। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনের মতো বিখ্যাত কোম্পানিগুলো একসময় স্টার্টআপ ছিল।

স্টার্টআপের বৈশিষ্ট্য

স্টার্ট-আপের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা করে তুলে।

উদ্ভাবনী ধারণা: স্টার্ট-আপ সাধারণত নতুন কোনো পণ্য বা পরিষেবা নিয়ে কাজ করে।

উচ্চ ঝুঁকি ও সম্ভাবনা: স্টার্টআপে সাফল্যের সম্ভাবনা যেমন বেশি, তেমনি ব্যর্থতার ঝুঁকিও অনেক।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবননির্ভরতা: বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ স্টার্টআপ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, উবার এবং পাথাও।

বিনিয়োগের প্রয়োজন: স্টার্টআপের দ্রুত বৃদ্ধি ও পরিচালনার জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়।

দ্রুত প্রবৃদ্ধি: স্টার্টআপের লক্ষ্য হয় অল্প সময়ে একটি বিশাল বাজার দখল করা।

স্টার্টআপের উদাহরণ

বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ষ্টার্ট আপ তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও কার্যক্রম দিয়ে সফল হয়েছে।

গুগল: একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে শুরু হয়েছিল। আজ এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি।

উবার: রাইড-শেয়ারিংয়ের ধারণাটি প্রথম নিয়ে আসে উবার।

পাঠাও: বাংলাদেশে পরিবহন ও ডেলিভারির ক্ষেত্রে একটি স্টার্টআপ হিসেবে শুরু হয়।

বাইজুস: শিক্ষা খাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে।

স্টার্টআপ বিজনেস প্লান

স্টার্টআপ শুরুর ধাপ

স্টার্ট আপ শুরু করতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়।

  • সমস্যা নির্ধারণ ও সমাধান খুঁজে বের করা
  • ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করা
  • টিম তৈরি করা
  • বাজার গবেষণা করা
  • বিনিয়োগ সংগ্রহ করা
  • পণ্য বা সেবার পরীক্ষা চালানো এবং বাজারে চালু করা

চ্যালেঞ্জ ও সফলতার গোপন রহস্য

স্টার্টআপ পরিচালনায় কিছু চ্যালেঞ্জ আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফান্ড সংগ্রহ করা, বাজারে প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করা এবং গ্রাহকের আস্থা অর্জন। তবে সঠিক পরিকল্পনা, উদ্ভাবনী চিন্তা, এবং ধৈর্যের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো জয় করা সম্ভব। সফলতার জন্য বাজারের চাহিদা বুঝে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ও গুণগত মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্টার্ট-আপ বিজনেস প্লান

একটি সাধারণ স্টার্ট-আপ বিজনেস প্লানে মিশন স্টেটমেন্ট, কী টু সাকসেস,মার্কেট এনালাইসিস, ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্ট এই বিষয়গুলোর একটা সংক্ষিপ্ত দিক নির্দেশনা থাকে।

আপনি যখন স্ট্যান্ডার্ড একটি বিজনেস প্লান তৈরি করার প্রতি দৃষ্টি দেবেন, দেখবেন আর একটি প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়ে যায়, বিজনেসের জন্য কি কি এলিমেন্টস আপনার লাগবে?

যেমন স্টার্ট-আপ অবস্থায় যে বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার উপর একটা চার্ট করে আপনি একটি চমৎকার আউট-লাইন দাঁড় করাতে পারেন।

১. আপনার এক্সিকিউটিভ সামারি কি হবে?

২. আপনার কোম্পানি ডেসক্রিপশন কেমন হবে?

৩. আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কি হবে?

৪. আপনার মার্কেট এনালাইসিস কেমন হবে?

৫. পরিসংখ্যান ও ইমপ্লিমেন্টেসন কিভাবে হবে?

৬. কার্যকর ম্যানেজমেন্ট টিম কিভাবে হবে?

৭. আপনার ফিন্যান্সিয়াল প্লান কি হবে?

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নিবন্ধন ও লাইসেন্সসমূহঃ

ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র,
ফায়ার লাইসেন্স,
ফ্যাক্টরী স্থাপনার রেজিষ্ট্রেশন,
অবকাঠামো ও ইউটিলিটি সার্ভিস,
ট্যাক্স ও ভ্যাট, কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন,
ডিজাইন, পেটেন্ট ও ট্রেডমার্কস রেজিষ্ট্রেশন,
আমদানি ও রপ্তানি পদ্ধতি লাইসেন্স,

নিবন্ধন ও লাইসেন্স সেবা নিতে যোগাযোগ করুন

পণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা বাংলাদেশে একজন উদ্যোক্তা হতে হলে যে কাজগুলো করতে হবেঃ

কি ব্যবসা তা নির্ধারণ করতে হবে।
মূলধন যোগার করতে হবে।
ব্যবসা যৌথ মালিকানাধীন হলে কে পার্টনার হবে তা নির্বাচন করতে হবে।
ব্যবসার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে তা ভাড়া/লীজ/কিনে নিতে হবে।
ব্যবসার গঠন বা কাঠামো অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স অথবা কোম্পানী রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
নির্ধারিত জায়গায় শিল্প স্থাপন করতে হবে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পয়ঃসংযোগ প্রভৃতি ইউটিলিটি সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।
যথাযথ পদ্ধতি মেনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ক্রয়, কাঁচামাল ক্রয় এবং টেকনোলজি/প্রযুক্তি নির্বাচন করতে হবে।
যথাযথ পদ্ধতি মেনে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে।

স্টার্ট আপ একটি অনন্য ব্যবসায়িক মডেল যা উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে সাফল্য অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে। সঠিক পরিকল্পনা এবং সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে যে কেউ একটি সফল স্টার্টআপ গড়ে তুলতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে স্টার্ট আপগুলো অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করছে।

উইকিপিডিয়া থেকে আরো জানুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*